পেইন কিলার ঔষধ কী
পেইন কিলার ঔষধ বা ব্যথানাশক ঔষধ এমন ওষুধ যা বিভিন্ন ধরনের ব্যথা উপশম করতে ব্যবহার হয়। দাঁতের ব্যথা, মাথাব্যথা, পিঠে ব্যথা, আঘাতজনিত ব্যথা, বাত বা অপারেশনের পরের ব্যথা—সবক্ষেত্রে সঠিক ব্যথানাশক সঠিক ডোজে প্রয়োজন। পেইন কিলার ঔষধ সাধারণত শরীরের ব্যথার অনুভূতি কমিয়ে দেয় বা প্রদাহ কমায়। সবচেয়ে প্রচলিত ব্যথানাশক হচ্ছে প্যারাসিটামল, আইবুপ্রোফেন, ন্যাপ্রোক্সেন, ডাইক্লোফেনাক, ট্রামাডল ও মরফিন।
ব্যথানাশক ঔষধের ধরণ
ব্যথা কমানোর ঔষধ সাধারণত তিনটি বড় ভাগে বিভক্ত-
১. প্যারাসিটামল
প্যারাসিটামল (Acetaminophen) সবচেয়ে নিরাপদ ও বহুল ব্যবহৃত ব্যথানাশক ঔষধ। হালকা থেকে মাঝারি ব্যথা ও জ্বর কমানোর জন্য ব্যবহার করা হয়। এটি পাকস্থলীতে ক্ষতি করে না তবে মাত্রাতিরিক্ত গ্রহণ করলে লিভার গুরুতর ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
২. নন-স্টেরয়ডাল অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ড্রাগস (NSAIDs)
NSAIDs যেমন আইবুপ্রোফেন, ন্যাপ্রোক্সেন, ডাইক্লোফেনাক ব্যথার পাশাপাশি প্রদাহ কমাতে কার্যকর। ব্যথা, বাত, মাংশপেশির ব্যথা বা আর্থ্রাইটিসে এদের ব্যবহার বেশি। তবে দীর্ঘদিন NSAIDs খেলে পাকস্থলীতে আলসার, রক্তক্ষরণ, কিডনি ক্ষতি ও হৃদরোগের ঝুঁকি থাকে।
৩. অপিওয়েড পেইন কিলার
অপিওয়েড শ্রেণির ব্যথানাশক যেমন ট্রামাডল, কোডিন বা মরফিন প্রধানত গুরুতর ব্যথা যেমন ক্যান্সার বা বড় ধরনের সার্জারির পরে ব্যবহৃত হয়। অপিওয়েড ব্যবহারে আসক্তি, শ্বাসকষ্ট, এমনকি ওভারডোজের ঝুঁকি থাকে। তাই এই ধরনের ঔষধ অবশ্যই চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে ব্যবহার করতে হয়।
দীর্ঘমেয়াদি ব্যথানাশক ব্যবহারের ঝুঁকি
বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রমাণিত যে ব্যথানাশক ঔষধ দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহার করলে ক্ষতির ঝুঁকি বাড়ে।
দীর্ঘদিন NSAIDs ব্যবহার করলে পাকস্থলী ও অন্ত্রে ক্ষত, আলসার ও রক্তক্ষরণ হতে পারে। এছাড়া কিডনি ক্রমে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে।
BMJ Open এর ২০২১ সালের একটি বড় গবেষণায় বলা হয়েছে, দীর্ঘমেয়াদি NSAID ব্যবহারকারীদের পাকস্থলীর ক্ষত ও কিডনি রোগের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি।
দীর্ঘদিন প্যারাসিটামল খেলে লিভার সিরোসিস বা লিভার ফেলিওর হতে পারে। Lancet এ প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত হাই ডোজ প্যারাসিটামল লিভার এনজাইম ক্ষতিগ্রস্ত করে।
অপিওয়েড দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহার করলে মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট অংশের কার্যকারিতা কমে যায়, আসক্তি তৈরি হয় এবং শ্বাসকষ্টের ঝুঁকি বাড়ে। JAMA ২০১৮ সালের এক বড় স্টাডি জানায়, দীর্ঘমেয়াদি ব্যথার জন্য অপিওয়েডের কার্যকারিতা সীমিত, বরং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বেশি।
কোন পেইন কিলার কার জন্য নিরাপদ
সাধারণ ব্যথা বা জ্বরের ক্ষেত্রে প্যারাসিটামল সবচেয়ে নিরাপদ বিকল্প।
প্রদাহ বা ফোলা থাকলে NSAIDs কার্যকর তবে পাকস্থলীতে সমস্যা বা কিডনি রোগীদের ক্ষেত্রে এগুলো সাবধানে খেতে হয়।
অপিওয়েড ব্যথানাশক শুধু গুরুতর ব্যথার জন্য এবং অবশ্যই চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে ব্যবহার করতে হবে।
গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে ব্যথানাশক ঔষধ বেছে নিতে বিশেষ সতর্কতা প্রয়োজন।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
ব্যথানাশক ঔষধ ভুলভাবে বা দীর্ঘদিন খেলে কিছু সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে
- গ্যাস্ট্রিক আলসার ও রক্তক্ষরণ
- লিভার ও কিডনির ক্ষতি
- হৃদরোগের ঝুঁকি
- অপিওয়েডে আসক্তি ও শ্বাসকষ্ট
ব্যথা কমানোর বিকল্প উপায়
সব ব্যথার জন্য ঔষধই একমাত্র সমাধান নয়। হালকা ব্যথায় গরম বা ঠাণ্ডা সেঁক, হালকা ব্যায়াম, পর্যাপ্ত পানি পান, পুষ্টিকর খাবার, পর্যাপ্ত ঘুম ও ফিজিওথেরাপি কার্যকর হতে পারে।
কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন
- যদি ব্যথা দুই থেকে তিন দিনের বেশি স্থায়ী হয়
- হঠাৎ তীব্র হয় বা ব্যথার ধরন অজানা হয়
- ওষুধে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়
- আপনি গর্ভবতী, শিশু বা কিডনি লিভারের রোগী হন
উপসংহার
ব্যথানাশক ঔষধ ব্যথা কমাতে প্রয়োজনীয় তবে ভুলভাবে বা বেশি দিন ব্যবহার বিপজ্জনক হতে পারে। সঠিক ব্যথানাশক বাছাই, সঠিক ডোজ মেনে চলা এবং অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া নিরাপদ থাকার চাবিকাঠি। ব্যথার প্রকৃত কারণ খুঁজে সমাধান করাই স্থায়ী সুস্থতার উপায়।