মাথাব্যথা খুব সাধারণ একটি সমস্যা। কখনো হালকা, কখনো তীব্র হতে পারে। আবার অনেক সময় এটি কোনো গুরুতর অসুস্থতার লক্ষণও হতে পারে। তাই মাথাব্যথা সম্পর্কে সচেতনতা জরুরি।
মাথাব্যথার সাধারণ কারণ
- ঘুমের অনিয়ম (কম ঘুম বা অতিরিক্ত ঘুম)
- মানসিক চাপ বা স্ট্রেস
- চোখের সমস্যা বা চশমার প্রয়োজন
- অনিয়মিত খাবার বা না খেয়ে থাকা
- দীর্ঘ সময় স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকা
- অতিরিক্ত গরম বা রোদে থাকা
- শরীরে পানি স্বল্পতা (ডিহাইড্রেশন)
- চা বা কফি হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়া
- হরমোন পরিবর্তন (বিশেষ করে নারীদের)
মাথাব্যথার ধরন ও লক্ষণ
টেনশন টাইপ হেডেক
- মাথার চারদিকে বা কপালে চাপ বা টান অনুভব
- স্ট্রেস, ক্লান্তি বা কাজের চাপের পর দেখা দেয়
মাইগ্রেন
- মাথার এক পাশে ধকধক ব্যথা
- আলো ও শব্দে অস্বস্তি, বমি বমি ভাব
- ব্যথা কয়েক ঘণ্টা বা দিনের মতো স্থায়ী হতে পারে
সাইনাস হেডেক
- কপাল ও চোখের চারপাশে চাপ
- নাক বন্ধ, হাঁচি, সর্দি
- নিচু হলে ব্যথা বাড়ে
ক্লাস্টার হেডেক
- চোখের পাশে হঠাৎ তীব্র ব্যথা
- চোখ লাল হয়ে পানি পড়তে পারে
- সাধারণত রাতে বা ঘুমের সময় শুরু হয়
ওষুধের কারণে মাথাব্যথা
- নিয়মিত ব্যথানাশক খেলে উল্টো মাথাব্যথা হতে পারে
- প্রতিদিন হালকা ব্যথা অনুভূত হয়
মাথাব্যথা কোন রোগের লক্ষণ হতে পারে
- মাইগ্রেন
- সাইনুসাইটিস
- উচ্চ রক্তচাপ
- মেনিনজাইটিস
- ব্রেইন টিউমার
- গ্লুকোমা (চোখের সমস্যা)
- স্ট্রোক
- ট্রাইজেমিনাল নিউরালজিয়া
- পানিশূন্যতা
- কম্পিউটার ভিশন সিনড্রোম
কখন ওষুধ খাওয়া যায়
- হালকা মাথাব্যথা হলে বিশ্রাম, ঠান্ডা পানি পান, আলো কমিয়ে দিন
- প্রয়োজনে প্যারাসিটামল বা টলফেনামিক অ্যাসিড সেবন করা যায়
- নিয়মিত ওষুধ সেবন বিপজ্জনক হতে পারে—কিডনি ও পাকস্থলির ক্ষতি হতে পারে
- মাইগ্রেন বা অন্যান্য রোগে ব্যবহৃত ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া খাবেন না
কখন চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে
- সপ্তাহে ২–৩ বার বা তার বেশি মাথাব্যথা হলে
- ব্যথা খুব তীব্র এবং ওষুধেও আরাম না পেলে
- চোখে ঝাপসা দেখা, জ্বর, ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া
- কথা জড়িয়ে যাওয়া, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া
- ঘুম থেকে উঠে মাথাব্যথা শুরু হলে
মাথাব্যথা হলে করণীয়
- পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম নিন
- প্রচুর পানি পান করুন
- চা-কফি কমিয়ে দিন
- চোখ পরীক্ষা করান
- ঠান্ডা পানি বা বরফ দিয়ে সেঁক দিন
- মানসিক চাপ কমাতে ধ্যান বা হালকা ব্যায়াম করুন
- মোবাইল ও কম্পিউটার ব্যবহারে বিরতি নিন
টলফেনামিক অ্যাসিড বেশি খাওয়া কি বিপদজনক?
হ্যাঁ।
এটি মাঝে মাঝে খেলে উপকার পেতে পারেন। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে ব্যবহারে কিডনি ও লিভারে ক্ষতি হতে পারে।
এছাড়া, অভ্যাসে পরিণত হলে ওষুধ ছাড়া মাথাব্যথা না কমার প্রবণতা তৈরি হয়।
উপসংহার
মাথাব্যথা কখনো সাধারণ, আবার কখনো গুরুত্বপূর্ণ রোগের লক্ষণ।
প্রতি সপ্তাহে বারবার হলে, বা ওষুধে কাজ না করলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
অতিরিক্ত ওষুধ না খেয়ে, নিয়মিত ঘুম, বিশ্রাম ও পানি পানের মাধ্যমে অনেকাংশে মাথাব্যথা এড়ানো সম্ভব।